মহান আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে ইসলামী শরীয়তে যতো নেক আমল রয়েছে তারমধ্যে কোরবানি অন্যতম নেক আমল। কোরবানি শব্দের অর্থ হচ্ছে ইসলামী শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী উট, গরু, মহিষ, বকরি, ভেড়া, দুম্বা একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে জবাই করা। এক্ষেত্রে আমাদের মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে কোরআন ও সুন্নাহর মধ্যে বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে।
এই কোরবানির নিয়মটুকু আজ থেকে প্রায় ৭ হাজার ৬শ’ ৫০ বছর আগে শুরু হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে যে নিয়মে কোরবানি তথা ঈদুল আজহা পালিত হচ্ছে সে সম্পর্কে তিরমিজি শরীফের হাদিসের আলোকে জানা যায়, নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম হিযরত করার পরে দ্বিতীয় হিজরিতে কোরবানি ও ঈদুল আজহার নামাজ ওয়াজিব হয়।
মুসলমানদের জন্যে ঈদের দিনটি যেমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ঈদের পূর্বের দিন তথা ৯ তারিখ ইয়াওমে আরাফা এই দিনটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল করার দিন।
মুসলিম শরীফের হাদিসের আলোকে জানা যায়, এইদিনে মহান আল্লাহ তা’য়ালা অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, কোরবানির দিনটি মুসলমানের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোরবানি হচ্ছে আমাদের আদি পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। সেজন্যে এই কোরবানির ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকটি কাজেই সুন্নতের প্রতি গুরুত্ব রাখতে হবে, যাতে করে এই সুন্নতের মাধ্যমে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
কোরবানির পশু ক্রয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কোরবানির পশুটি ত্রুটিমুক্ত থাকে। কেননা ইবনে মাযাহ শরীফের হাদিসের আলোকে জানা যায়, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, কোরবানির পশুর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে নেকী প্রদান করা হবে।
কোরবানির পশুটি জবাই ও গোশত বণ্টনের ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে তাকওয়ার কোনো রকমের খেলাপ না হয় এবং শরিকদারের মধ্যে কোনো রকমের মনোমালিন্য না হয়।
কোরবানিকৃত পশুর যে অংশ ভক্ষণ করা নিষেধ ওই অংশ ব্যতীত সকল গোস্তই সমানভাবে বণ্টন করতে হবে। এরপর গরিব-মিসকিন যারা রয়েছে তাদের ব্যাপারেও প্রত্যেকের মতামতের ভিত্তিতে দান করার ব্যবস্থা করতে হবে। কারো ওপরে জোরজবরদস্তি করা যাবে না।
কেননা দান করাটা প্রত্যেকের ইচ্ছার ওপরে নির্ভর করবে। যেহেতু সূরা হজের ৩৭নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, আমার নিকট তোমাদের কোরবানির গোস্ত ও রক্ত কোনোটাই পৌঁছে না, একমাত্র তাকওয়াটাই আমার নিকট পৌঁছে থাকে।
রাসুলে পাক (সাঃ) বলেছেন, তাকওয়া হচ্ছে অন্তরের কাজ। সেজন্যে প্রত্যেকেই তার অন্তরকে শাণিত করে একান্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে কোরবানির যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্যে ইসলামী শরীয়তে একান্ত গুরুত্ব দিয়েছে।
এ বিষয়গুলো আমাদের প্রত্যেকেরই আরো বিস্তারিতভাবে জেনে প্রত্যেকের জীবনে বাস্তবায়ন করা উচিত।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে ইসলামী বিধি-বিধানগুলো জেনে-শুনে বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুক।